Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ঘটনাপুঞ্জ

** মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ইসলামের ৮ টি দিক নির্দেশনা:
মানব জীবনে দুশ্চিন্তা আসা খুবই স্বাভাবিক। এটি মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি যেন মুদ্রার এপিট-ওপিঠ। এতে হতাশ হলে চলবে না। এমন মানুষ পাওয়া কাঠিন, যার কোন দুশ্চিন্তা নেই। সুখ-দু:খ মিলিয়েই মানুষের জীবন। ইহকালীন জীবনে কষ্ট-ক্লেশ মানুষের সঙ্গী। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে,“ নি:সন্দেহে আমি মানুষকে সৃাষ্ট করেছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে।”  (সুরা বালাদ,আয়াত-৪)
তাই জীবনে চলার পথে দু:খ-দুর্দশা আসতেই পারে। হতে পারে মানসিক টেনশন। এতে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে প্রতিটি পরিস্থিতিকে জয় করে নিতে হবে। মানসিক চাপ থেকে মুাক্ত পেতে ইসলামের ৮ টি দিক নির্দেশনা নিন্মে তুলে ধরা হলো-
১।  তাকদিরের ওপর বিশ^াস: ইসলাম তার অনুসারিদের তাকদিরের ওপর ঈমান রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। যখন একজন মানুষের নিশ্চিত বিশ^াস থাকে যে,আমার ভাগ্য আল্লাহর হাতে। আমার জন্য যা উত্তম তিনি তা আমার সৃষ্টির পূর্বেই লিখে রেখেছেন। সে অনুসারেই দুনিয়ার জীবনে সুখ-দু:খের সম্মুখীন হতে হয়। ভাল কি মন্দ সবই তাঁর পক্ষ থেকেই আসে। আসমানের ফয়সালার যখন কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট হওয়া শেখে। তখন সব রকম পেরেশানি, মানসিক চাপ শেষ হয়ে যায়। তখন প্রতি মুহূর্ত সে ভাবে এটাই আমার ভাগ্যে ছিলো। এর মধ্যেই আমার কল্যাণ নিহিত। এই তাকদিরের বিশ^াস রাখার মাধ্যমে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটে।
পবিত্র কোরআনে এসেছে “আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান,  তাহলে অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই...।( সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭)
“পৃথিবীতে  অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যায় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার পূর্বেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।” (সুরা হাদিদ, আয়াত-২২)
২। আল্লাহর ব্যাপারে সু-ধারণা পোষণ: মানসিক টেনশন কমাতে আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সুরা তালাক, আয়াত-০৩)
রাসূল (সা:) বলেছেন,‘আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, আমি সেরুপ, যেরুপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি-৬৯০১)
৩। নামাজের ব্যাপারে যতœবান হওয়া: যেকোন বিপদ-মুসিবত,পেরেশানির সময় নামাজের ব্যাপারে যতœবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা:) কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন। (আবু দাউদ-১৩১৯)
৪। বেশি বেশি ইস্তেগফার: মানসিক চাপ কমাতে ইস্তেগফারের জুড়ি নেই। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,‘অত:পর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষামা চাও, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। ফলে তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে ।( সুরা নূহ-৭১)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দিবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।(আবু দাউদ-১৫২০)
৫। অধিক হারে দুরুদ পড়া: দুরুদ পাঠ আল্লাহ তায়ালার রহমত প্রাপ্তির বিশাল মাধ্যম। আতœপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়। দুরুদ শরীফ এমন একটি মাকবুল আমল যা পাঠ করলেই আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন।
উবাই ইবনে কা’ব (রা:) তিনি সম্পূর্ণ সময় নবীজির উপর দুরুদ পাঠ করার কথা বললে, রাসূল (সা:) বললেন, তাহলে এখন হতে তোমরা পেরেশানি দুর হওয়ার জন্য দুরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দুরুদই যথেষ্ট।( জামে তিরমিজ-২৪৫৭)
৬। ধৈর্য ধারণ: ধৈর্য ধারণ করতে পারলে সবসময় সব হালতে প্রসন্ন থাকা যায়। খুব পেরেশানি ও সংকীর্ণ অবস্থাতেও জীবন থেকে হতাশ হতে হয় ন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের জায়গায় জায়গায় ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের এক জায়গায় এসেছে, নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।(সুরা বাকারা-১৫৩)
অন্য আয়াতে এসেছে, “যে কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্ল্হাই তার (কর্ম সম্পাদনের) জন্য যথেষ্ট। নিশ্চ্য়ই আল্লাহ তার কাজ পূরণ করেই থাকেন। (অবশ্য) আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটা পরিমান নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। (সুরা তালাক-০৩)
৭। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ: ইসলামে পরামর্শের গুরুত্ব অনেক। আতœকেন্দ্রিক মনোভাব পরিহার করে অন্যদের সঙ্গে পরামর্শভিত্তিক কাজ করা ইসরামের শিক্ষা। তবে পরামর্শের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো –পরামর্শ যথার্থ এবং বিবেক বুদ্ধিসমপন্ন নির্ভরযোগ্য মানুষের সঙ্গে করা।
পরামর্শের কারণে অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীলদের চিন্তাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর অভিজ্ঞদের চিন্তার প্রভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাও গভীর হয়, সমৃদ্ধ হয়। পেরেশানি, মানসিক টেনশন তো বহু দুরে পালায়। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘যে ব্যাক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।’
৮। দোয়া করা: মানসিক চাপ কমাতে নিয়ম করে দোয়া করা উচিত। কারণ দোয়া হলো ইবাদতের মূল। দোয়া করলে আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
রাসূল (সা:) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগতি আছি, কোন বিপদগ্রস্থ লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা তার সেই বিপদ দুর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ:) এর দোয়া। দোয়াটি হলো-“লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ¦লিমিন”। অর্থ:- হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নি:সন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।(তিরমিজি-৩৫০৫)
চিন্তা ও পেরেশানের সময় রাসূল (সা:) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’যুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযান, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল”।(বুখারি-২৮৯৩) অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দু:খ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।
আল্লাহপাক আমাদের মানসিক চাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য উল্লেখিত আমলগুলো করার তৌফিক দান করুন এবং আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন।(আমিন)